Ad Code

Responsive Advertisement

সাইকো থ্রিলার গল্প : নামানুষ || Bangla Psycho Thriller Story

বাংলা রহস্যময় গল্প, বাংলা থ্রিলার গল্প, বাংলা রোমান্টিক গল্প, প্রেমের গল্প, সাইকো গল্প


সারা শহর জুড়ে বৃষ্টির তার রাজত্ব প্রকাশ করছে। সাথে দমকা হাওয়া। মনে হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের ডিপ্রেশন হয়েছে। মানুষ তাদের ডিপ্রেশন অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে না এরা চার দেয়ালে ডিপ্রশনের জাল বুনতে থাকে, তবে সাগর তার কষ্টগুলো বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। তাই সাগর ডিপ্রেশন স্থলভূমিতে ছড়িয়ে দেয়। 

বাবা সারাদিনই তার নিজেস্ব লাইব্রেরীতে বইয়ের পাতায় মুখ গুজে কাটিয়ে দিতে পারেন। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়েছে বলে মনে হয় না।


আমি আমি নম্র স্বভাবের। পানি নড়বে তবে আমি স্থির থাকবো এই টাইপ আরকি। সেই কল্যানে স্যারদের সুবাদে ক্লাসের ভদ্রতার রোল মডেল বনে গেলাম।


মা মারা যাওয়ার সময়ও নির্বাক ছিলাম। মারা যাওয়ার আগে উপহার স্বরূপ ছোট ভাইটাকে আমাদের দিয়ে গেলেন। বাবা ডেকে বললেন

- কি রে বাদল, বাব বেটা মিলে তোর ছোট ভাইটাকে মানুষ করতে পারবো না?

আমি শান্তভঙ্গি নিয়ে জবাব দিলাম

- হ্যা পারবো! খুব পারবো।

- হ্যা তাহলেই হবে। এ বয়সে আর বিয়ে টিয়ে করবো না। তাতে তোদের কষ্ট।

আমি জবাব দিলাম না।


তবে বাবা তার কথা রাখেনি। দুবছরের মাথায় তিন বিয়ে করে নতুন মা ঘরে আনেন।

নতুন মা আমাদের উপর থেকে মেন নিলেও মন থেকে মেনে নেননি সেইটা আমি বুঝতে পারতাম। 

কেননা এইসব বাচ্চারা খুব ভালো বুঝতে পারে। কারন এসমে তাদের ইএসপি ক্ষমতা বেশ সক্রিয় থাকে।


সবকিছুই ঠিকঠাক চলতেছিল হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। তখন আমার বয়স ১৫ আর ভাইয়ের বয়স ৬। ধীরে ধীরে সৎ মায়ের আসল চেহারা বের হতে থাকে। শুরু হয় অত্যাচারের নজরানা। শুনেছি বাবা মায়ের নামে বাড়িটা লিখে লিখে দিয়ে গেছেন। তিনি আরেক পুরুষকে বিয়ে করে এ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাদের ফুটফরমাশ খেটেও সন অত্যাচার সহ্য করতাম ভাইটির মুখপানে চেয়ে। তখনও নির্বাক ছিলাম। শান্তই ছিলাম নিত্যান্ত। বয়সের তুলনায় ছোট বলে আবার হয়ত এইটাই আমার স্বভাব।

.

দুই

__________


সব অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই তেজকুনি পাড়া এলাকায়। নুন আনতে পান্তা ফুরালেও দুই ভাই সুখেই ছিলাম বেশ। ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে লেখাপড়া আর করা হয়নি।


মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ছোট্ট একটা ষ্টেশনারী দাড় করাই। ভাইটা তখন ইন্টার পাস করলো ভালো রেজাল্টের সাথে। আশটা আরো বড় হতে লাগল ওকে ঘিরে। ভাইটাও ঘামের দাম দিল। ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮ তম। খুশিতে চোখের পানিনি ধরে রাখা দুষ্কর।


বাড়িওয়ালা হান্মান সাহেব। ভদ্রলোক বেশ ভালো মানুষ। আমার দেখা গুটিকয়েক ভালো মানুষদের মধ্যে একজন। ষ্টেশনারী দাড় করাবার পিছিনে তার আর্থিক ভূমিকা ভোলার মত নয়। তার দুঃসম্পর্ক এর আত্নীয় আশ্রিতা হিসেবে তার বাড়িতে থাকে। নাম নিলা। বয়স ১৯ থেকে ২৩ এর মধ্যে হবে, মেয়েদের বয়স চট করে ধরে ফেলা সম্ভব নয়।


মেয়েটির বাহ্যিকতা বর্ণনা করার মত সাহিত্য বিদ্যা আমার পেটে নেই। থাকলেও সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারতাম কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। মেয়েটির শঙ্খগড়ন শরীর। শ্যাম বর্ন। চোখ দুটো টানা টানা ঠিক প্রতিমার মত। তার কাজললেপ্টানো চোখ দেখে মনে হয় এ জগৎ সংসারের সমস্ত মায়া তার চোখে আপন উদ্যমে খেলা করছে। তার চুলের মুগ্ধতা দিয়ে দিয়ে সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে রেখেছে! তবে মেয়েটিকে হাসতে দেখিনি কখনো। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরতাম তাকে দেখতাম ব্যালকনিতে বসে থাকতে। মোটকথা আমার নিরবতাময় জীবনে ঝড়ের প্রকোপ বাধিতে দিয়েছে রিতিমত। 


লাজলজ্জার মাথা খেয়ে সাহস করে বাড়িওয়ালা চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাবই দিয়ে ফেললাম। তখন আমার ষ্টেশনারীটাও একটু বড়সড় হয়েছে। তিনি এমন খুশি হলেন যেন আমি তার ঘাড়ের বোঝা তুলে নিচ্ছি। বিয়ের বন্দবস্ত সব হয়ে গেছে। নিলা রাজি কিনা তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কি হয়নি সেটি বলতে পারব না। হয়ত আশ্রিতাদের কোম মতামত থাকতে নেই। যাইহোক বিয়ের কাজ সম্পন্ন হল। নিলাকে বেশ খুশি খুশিই মনে হল।

.

তিন 

___________


মা মারা যাওয়ার পর সুখ নামক জিনিসটাকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। তিনজনের ছোট্ট সুখি সংসার। সুখটাকে আঁকড়ে ধরে বাচতে চেয়েছিলাম। প্রকৃতি হয়ত সেটা চায়না কেননা বিয়ের আড়াই বছর পার হয়ে গেল অথচ আমাদের কোল জুড়ে নতুন কোন অতিথি এলো না। নিলা ক্রমেই বিদঘুটে স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে! তার কথার তীর্যক তীর হৃদপিনন্ডে গেথে যায়। 


এই যন্ত্রনার আগুনে অক্সিজেন হয়ে হানা দিলো ফার্টিলিটির রিপোর্ট। রিপোর্ট নেভেটিভ আসলো। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ঝিম ধরা যাচ্ছে মাথাটা। নিলা অনেক কান্নাকাটি করতে লাগলো। রাতে নিলার মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যার্থ শান্তনা দেয়ার চেষ্টা চলালাম। 


তবে নিলা দমবার পাত্রি নয়। তার ব্যাবহারের অবনতি আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। সে আমাকেও ফার্টিলিটির টেস্ট করাতে বল্লো।তার ধারনা আমি ডক্টরকে টাকা খাইয়ে আমার দোষ তার ঘারে চাপাচ্ছি। প্রয়োজনে সে অন্য পুরুষ দ্বারা এক্সপেরিমেন্ট চালাবে। আমি হতভম্ব! কি বলছে এসব নিলা? এটা কি আমি যে নিলা কে চিনি সেই নিলা নাকি প্যারালাল ইউনিভার্স এর কোন নিলা। 


বাসা থেকে বেরিয়ে ষ্টেশনারীতে গিয় বসলাম। হিসাব মেলাতে মেলাতে প্রায় অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় গিয়ে দরজা খুললাম। আমাদের বাসায় বাইরে থেকে দরজা খোলার একটা ট্রিক আছে, নিলাকে বিরক্ত করবো না বলে সেইটা প্রয়োগ করেই ঘরে ডুকলাম। ডুকতেই ভাইটার বেডরুম থেকে চাপা শব্দ কানে ভেসে আসলো। দুই কদম এগুতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কামার্ত মেয়ে মানুষের শিৎকার। ছিঃ সজলটা এত নিচে নেমে গেছে! আমার ভাই হয়ে রাস্তার মেয়ে মানুষ বাসায় এনে ফুর্তি করছে? ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করতে রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালাম। আমার লোমগুলো মুহূর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল। নিলা!!! কি করছে ও এসব? সারা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেল। এই পৃথিবী নিজ কক্ষপথে আবর্তনশীল না, এটি পুরোপুরি স্থির। নিঃশব্দে বেড়িয়ে এলাম। 


পরেরদিন সকালে বাসায় আসলাম খুব সহজ স্বাভাবিকভাবে। আচরণেরও কোন পরিবর্তন হল না। ব্যাপারটা এমন যাতে কিছুই হয়নি। আমার রুটিন অনুযায়ী জীবনযাপন করতে লাগলাম। 

মাসখানেক পর নিলা হাসি হাসি মুখে বলল 

- বাদল

- হ্যা। কিছু বলবে? 

- আমার লজ্জা লাগছে।

- আরে বল কি হয়েছে?

- আমি কনসিভ করেছি। খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে।

আমি জবাব না দিয়ে হাসলাম।


পরেরদিন দুপুরে

- এই সজল আমার রুমে একটু আয়তো

- জ্বি ভাইয়া আমাকে ডেকেছও?

- হ্যা। রেডি হয়ে নে ত চটপট। 

- কেনো কোথায় যাবে?

- দাকানের কাজে যাবো। আমাকে সাহায্য করবি চল। 

- আচ্ছা। 

বেরিয়ে পড়লাম দুই ভাই মিলে। 

- এই পুরোনো গ্যারেজ ঘরে কি কাজ ভাইয়া? 

- পুরনো বইগুলো ওই কোনাটায় রেখে আয় তো। 

সজল গেল বাধ্য ছেলের মত আর আমি পেছন থেকে পুরনো রড দিয়ে সজোরে এক বারি। কিছু রক্ত মুখে ছিটে এল! জ্ঞানহারা জ্ঞানহারা অবস্থা। টেনে তুলে চেয়ারে বসালাম। আগে থেকে রেখে যাওয়া দড়ি দিয়ে বেধে ফেললাম, নিষ্পাপ মুখে গ্লানিভরা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাচ্ছি। নিজের হাতের কারুকাজ দেখে নিজেই মুগ্ধ হলাম। এবার মাথাটা আলাদা করলেই কেল্লাফতে। বসিয়ে দিলাম এক কোপ, গরুর মত গড়গড় শব্দ যে মানুষের শ্বাসনালি থেকে বের হয় না এ ব্যাপারে ধারনা পাওয়া গেল। 


একেবারে শান্ত স্বাভাবিক ভাবে বাসায় ফিরলাম। নিলার এসে পাশে বসল নিলাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। 

নিলা শান্ত গলায় বলল

- সজল কোথায় তুমি কি জানো? বলে গেছে কিছু তোমাকে? দুপুর থেকে ঘরে নেই। 

- হ্যা বলে গেছে। স্ট্যাডি টুরে গেছে ইউনিভার্সিটি থেকে।

- আমাকে তো কিছু বলল না। 

- তুমি ছিলে না তাই বলে যায়নি। চিন্তা করো না।

- আচ্ছা।


নিলাকে বললাম তোমার ওই নীল শাড়িটা পড় না। ওই শাড়ীটা পড়লে তোমাকে শেষের কবিতার লাবন্যলতার মত লাগে হয়ত তার চেয়েও সুন্দর! সিন্ধ কদমফুলের উপরে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে যে আভা সৃষ্টি করে তার মত লাগছে আজকে নিলাকে। না ঠিক মিলল না কদম কখনো নীল হয়না। যাক না মিলুক ক্ষতি নেই। কিছু ক্যালকুলেশন অমিল থাকাই ভালো।


নিলার সাথে জোৎস্না স্নানে মেতে উঠেছি। এরপরের প্লান মেয়েটির পছন্দের খাবার নিজ হাতে তৈরি করব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। 

নিলা অবাক হয়ে বললে এতো ভালোবাসা যে আজকে? ব্যাপার কি? হুম?

- কেনো ভালোবাসা অন্যায়?

- আহহা! তা হবে কেন! খাবারটা বেশ মজা হয়েছে। ম্যাজিক করলে নাকি?

- না ম্যাজিক না। তরকারিতে সজলের স্কটাম কুচি কুচি করে দিয়েছি। তোমার জন্য স্পেশাল।

নিলু আতকে উঠলো। আমার মুখ ভঙ্গি দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না। বড়ই বুদ্ধিমতী মেয়ে।


দৌড়ে বেসিনে গিয়ে আঙুল গলায় ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করতে লাগল।

আমি বুঝলাম না যে জিনিস কাচা উপভোগ করতে পারলো রান্না করে উপভোগ করায় দোষ কি?

ছুটে গিয়ে পেট বরাবর জোরে এক লাত্থি! দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

খাটের উপর নিয়ে গেলাম।

যেই খাটে শিৎকার আজ সেই খাটেই চিৎকার। Bed of thron u can say! হা হা হা।

হাত, পা দড়ির সাহায্যে খাটের পায়ার সাথে বেধে দিলাম। আয়রন (ইস্ত্রি) মেশিনটা প্লাগ ইন করেছি। গত সপ্তাহে ফিলিপস সো রুম থেকে কিনলাম। নিলাকে বিবস্ত্র করে দিলাম, এখন হবে আয়রনের খেলা। নিলার পেটে স্মুথলি ইস্ত্রি কিরতে লাগলাম গোলাপি চামড়া গুলো কালচে বর্নে রূপ নিচ্ছে। শরীরের প্রত্যেক ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে আমার রঙের খেলা দেখাতে লাগলাম।


দ্বিতীয় ধাপে আবার পেটে লাত্থি। জেগে উঠলো আর্তনাদ করে। মুখে ঘামে ভেজা মোজা গুজে দিলাম। কিং সাইজ হাতুড়ি এনে রাখিয়েছিলাম সেবার যখন ঘরের কিছু ফার্নিচার আনি। সেটা এভাবে কাজে লেগে যাবে ভাবিনি। হাতুড়ি দিয়ে প্রত্যেক লিগামেন্টের জয়েন্টে জয়েন্টে বারি বসাতে লাগলাম। নিলার চোখ ফুলে বেড়িয়ে যাবার উপক্রম। না এবার লক্ষ স্থির করা প্রয়োজন।শুভ কাজে ধীরস্বভাব মানায় না। কপালের উপর নিরিখ করে দিলাম বারি। বিঙ্গো!!! চারিদিকে মাথার ঘিলু গোলো ছিড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। আহহহ! কি মনোরম দৃশ্য।

গোসল সেরে কাপড় বদলিয়ে, পারফিউম লাগিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বেড়িয়ে পরলাম গন্তব্যহীন পথে।


আসলে আমি অশান্ত হলে আমার শরীর ভীষণ রহমস হয়ে যায়। সামনের দুটো দাত বেরিয়ে আসে, পিঠের দুপাশে তরুণাস্থি যুক্ত ডানা বেরিয়ে আসে, নখ গুলো বড় হতে শুরু করে, তীর্যক কাঁটাযুক্ত লেজ বের হয়। আমার আসল রূপ তো আর পৃথিবীর মানুষকে দেখাতে পারি না তাই না?



সাইকো থ্রিলার স্টোরি, রহস্যময় গল্প! 

Post a Comment

0 Comments