স্মার্টনেস হলো বুদ্ধিমত্তা এবং শরীরী ভাষায় অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতা। আর এই সংজ্ঞাটাই অনেকেরই বোধগম্য হয় না, আর সেখানেই মূল সমস্যাটি তৈরী হয়।
তারা মনে করে স্মার্টনেস ভালো জামাকাপড় পরিধানের মাধ্যমে আসে, আর যারা এগুলো মেইন্টেন করে তারাই হলো স্মার্ট। কিন্তু এইটা সম্পূর্ণ ভুল। সুন্দর জামাকাপড় পড়লেই স্মার্ট হওয়া যায় না, হ্যা এইটা স্মার্টনেসের একটা ক্ষুদ্র অংশ তবে পুরোটা নয়। প্রোপার স্মার্টনেস আয়ত্ত করতে চাইলে নিজের বুদ্ধিমত্তা, ষোড়ীড়ী ভাষা এবং আরো কিছু এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস এ শান দিতে হবে। কেননা বাহ্যিকতার সাথে সাথে ভিতরকার ভিত্তিটাকেও যে স্থাপন করা জরুরী।
স্মার্ট মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে খুব সহজে অন্য মানুষদের মাঝে নিজের কথা বা আইডিয়াগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে পারে। তাদের মানুষকে কনভেন্স করার দক্ষতা বেশ প্রশংসনীয়।
সবার মাঝে নিজের ভ্যালু ক্রিয়েট করার অসাধারণ ক্ষমতা তাদের মধ্যে বিদ্যমান। কেউ এমনি এমনি আপনাকে সম্মান সহজ ভাষায়য় দাম দিবে না। নিজের সম্মান বা দাম বৃদ্ধি করার জন্য আপনাকে তাদের সম্মুখে আপনার বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্টনেসের পরিচয় দিতে হবে। আর স্মার্ট মানুষদের সবথেকে বড় গুন হচ্ছে- যে কোনো বিষয় সম্পর্কে তাদের সাধারণ ধারনা থাকে যা অন্যদের চোখে তাকে তুখড় বুদ্ধিমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায়।
এবার আসি যে স্মার্টনেস কেন প্রয়োজন! আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুনরায় ঘুমতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার সময়ের সার্কেলে আপনাকে কতশত মানুষের সাথে ওঠা-বসা করতে হয় একবার ভেবে দেখেছেন? আপনাকে প্রতিদিন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শত শত মানুষের সাথে চলতে হচ্ছে, মত বিনিময় করতে হচ্ছে এবং কাজ করতে হচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই কাজেত ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে সামলানোর জন্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে পরে। আর আপনি যতবেশি মানুষকে কনভেন্স করতে পারবেন তত বেশি আপনার কাজের গতি স্মুথ হবে আর আপনি সহজেই সাফল্যের দেখা পাবেন। তবে স্মার্ট হওয়াটা এত সহজ ব্যাপার নয়। যে আপনি চাইলেন আর রাতারাতি স্মার্ট ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন। এর জন্য ধৈর্য, পরিশ্রম আর কিছু কৌশল অবলম্ব করা জরুরী
নিচের ৯টি কৌশল অবলম্বন করে আপনিও নিজেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
১। কোন কিছু জানরে উৎসাহিত থাকুন
সবসময় উৎসুক থাকুন। কোন কিছু আয়ত্তে আনতে বা শিখতে প্রথামত উৎসাহের বিকল্প আর কিছু নেই। উৎসাহের মাত্রা যত প্রখর হবে শেখার সময়ও তত হ্রাস পাবে। অন্যদিকে উৎসাহহীন কাজ তেমনটা এগোয় না। কাজের স্বাদটা পানসে লাগে। তাই এমন একটি দারুন গুনকে নিজের ভিতরে ধারন করার চেষ্টা করুন। আর আপনি যখনই এই চর্চাটা শুরু করে দেবেন কিছুদিন পর আপনি নিজেই টের পাবেন যে আপনার মস্তিষ্ক আগের তুলনায় দারুন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, আর আপনি প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে স্মার্ট করে তুলছেন। আর এই পরিবর্তনটি আপনার জীবনে সুফল বয়ে আনবে।
২। নতুন কিছু শিখতে সব সময় প্রস্তুত থাকুন
জ্ঞান কখনো বিফলে যায় না। কোন না কোন ক্ষেত্রে এই জ্ঞানের আলোই আপনাকে পথ দেখিয়ে দেবেই। কিছু শিখলেন বা কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলেন সেই জ্ঞানটা কখনোই ভ্যালুলেস হবে না। আপনার জীবনের এই দীর্ঘ চলার পথে কোন না কোন ধাপে আপনার এই জ্ঞানটা কাজে লাগেই যাবে। তাই নিজের জ্ঞানটাকে কোন গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর প্রভাব বিস্তার করাই শ্রেয়। তাই শেখার ক্ষেত্রে কোথাও "না" শব্দটি উচ্চারণ করবেন না কেননা আপনি নিজেও জানেন না আজকে যেটা শিখছেন শেটা কখন, কিভাবে, কোন পরিস্থিতিতে আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে আপনার কাজে লেগে যাচ্ছে। তাই নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং সুযোগ পেলেই শিখে ফেলুন। এর ফলাফল হয়ত সাথে সাথেই পেয়ে যেতে পারেন আবার ভবিষ্যতের কোন এক গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো পর্যায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
৩। প্রতিদিন সংবাদ পত্র পরুন
ভালো অভ্যাসগুলোর মধ্যে সংবাদ পত্র পড়ার অভ্যাসটা অন্যতম। সারা পৃথিবীতে কোথায় কি ঘটছে তার সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জানতে পারবেন সংবাদ পত্র পড়ার মাধ্যমে। যা আপনাকে তথ্যগত দিক থেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। আর এসব তথ্য আপনার বিভিন্ন কাজে সাহায্য করবে। যেমন বিসিএস পরিক্ষিয়া, ভর্তি পরীক্ষায় এবং চাকরীর ইন্টার্ভিউতে। আর আপনি যখন এতকিছু জানবেন তখন আপনি অকল্পনীয়ভাবেই নিজে নিজে স্মার্ট হয়ে উঠবেন।
৪। ভালো ভালো বই পড়ুন
বই পড়লে মানুষের সৃজনশীলতা হাজার গুন বৃদ্ধি পায়। বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞানের আলোর দিশারী। বই পড়া আপনার সৃজনশীলতাকে প্রখর করব তুলবে। আর আপনার ভিতরের সংকীর্ণ চিন্তা ও সীমাবদ্ধতাকে দূর করে দেবে। তাই বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস তৈরী করুন। চেষ্টা করুম ভালো ভালো বই টানা শেষ করে যেতে। এটা আপনাকে শুধু স্মার্ট করে তুলবে না বরং আপনার জীবনের নানা ধরনের অবদান রাখতে পারে বই পড়ার অভ্যাস।
৫। নতুন নতুন আইডিয়া বের করুন
একোটি ব্যাপারে সবাই একমত যে নতুন নতুন আইডিয়ে যে তৈরী করতে পারে সে তুলনামূলক ভাবে অন্যদের চেয়ে বেশি স্মার্ট হয়ে থাকে। স্মার্ট হতে হলে আপনার শেখার জন্য আপনার মনের দরজা সবসময় খোলা রাখতে হবে। তাই চারপাশ থেকে গ্রহন করুন। এবং নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অভিনব কিছু আইডিয়া উদ্ভাবন করার চেষ্টা করুন। এটা আপনাকে স্মার্টনেসের সাথে সাথে পৌছে দেবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
৬। স্মার্ট লোকজনদের সাথে চলুন
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে- সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। খারাপ মানুষদের সংস্পর্শে থাকলে ভালো মানুষও তাদের প্রভাবে খারাপ মানুষে রূপান্তরিত হয়। তাই নিজেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হলে স্মার্ট মানুষদের সাথে চলাফেরা করতে হবে। কেননা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নতুন নতুন আইডিয়া থেকে অনেক অজানা তথ্য আপনি জানতে পারবেন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন যা আপনার জীবনে সুফল বয়ে আনবে।
৭। মনকে উজ্জীবিত রাখুন
মন ভালো না থাকলে কোন কিছুই ভালোলাগে না। বলা চলে মনই আমাদের কন্ট্রোল করছে। কেননা মন বিষাদগ্রস্ত থাকলে কোন কাজে মনযোগী হওয়া যায় না। মন খারাপ থাকলে রাজ্যের হতাশা ঘিরে ধরে। মুড়িয়ে নেয় তার সুখহীন চাদরে। যার ফলে জীবনে বেচে থাকার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। তাই মনকে নিজেরর কন্ট্রোলে রাখা চাই। মনকে উজ্জীবিত রাখতে হবে। আর আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে নিজের মনকে উজ্জীবিত রাখতে সক্ষম হন তাহলে আপনার মন সক্রিয় থাকবে। এবং আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় কাজ করবে! তাই মনকে সতেজ রাখুন দেখবেন ম্যাজিকের মত দিনে দিনে স্মার্ট হয়ে যাচ্ছেন।
৮। আইডিয়াগুলোকে সবসময় লিখে রাখুন
মানুষের মন ভুলে যেতে বড্ড পছন্দ করে। বিশেষ করে আইডিয়া, সদ্য মাথায় ঘোরা কোন কবিতার লাইন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আপনার মাথায় যে আইডিয়াই আসুক না কেন সেটা তাৎক্ষনিক লিখে ফেলুন। যাতে করে পরবর্তীতে ভুলে গেলেও লেখা দেখে মনে করা যাবে। ফাই সবসময় সাথে একটি নোটবুক রাখুন অথবা স্মার্টফোন ব্যাবহার করলে নোট লিখে রাখার অ্যাপস ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। আর এই প্রক্রিয়া আপনাকে পরবর্তীতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করবে।
৯। যা জানেন তা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন
যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনে হিংসার পরিমাণটাও বারছে দিন দিন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। ফলে কেউ কারো আইডিয়া অন্যদের সাথে শেয়ার করে না। কিন্তু এইটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। তাই আপনি যা শিখেছেন, আপনি যেটা জানেন সেটা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এর ফলে আপনি আপনার আইডিয়া সম্পর্কে তাদের মতামত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারবেন। একইসাথে অন্যদের সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার আইডিয়ার একেবারে স্বচ্ছ একটি ছবি আপনাআপনি তৈরী হয়ে যাবে আপনার মস্তিষ্কে। যেটা আপনার আইডিয়াকে সূক্ষ্ম ও পরিপূর্ণ করে তুলবে। তাই কখনো নিজের আইডিয়া অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভয় পাবেন না।
উপরের টেকনিকগুলো ফলো করলে আপনি সহিজেই স্মার্ট হতে পারবেন বলে আশাবাদী।
ধন্যবাদ।

0 Comments